রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পাপিয়ার কারণে অনেকে আতঙ্কিত, বিব্রত

পাপিয়ার কারণে অনেকে আতঙ্কিত, বিব্রত

স্বদেশ ডেস্ক:

যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া গ্রেফতারের পর অনেকে এখন আতঙ্কিত। আবার অনেকে বিব্রত। যারা পাপিয়ার খদ্দের ছিলেন তারা আতঙ্কে রয়েছেন। আর যাদের পাপিয়া নানা অপকর্ম করতে বাধ্য করেছেন, যাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন বা অজান্তে পাপিয়ার দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছেন তারা বিব্রত। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, পাপিয়া অনেক নিরীহ তরুণীকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছে। দিনের পর দিন আটকে তাদের মারধরসহ নানা নির্যাতন করেছে। পতিতা পল্লীর মক্ষীরানীরা নিরপরাধ নারীদের সাথে যে আচরণ করে, পাপিয়া তেমনই আচরণ করত তার ডেরার নিরপরাধ তরুণীদের। এই তরুণীদের মধ্যে অনেককে ভালো চাকরি দেয়ার নাম করে ওপরতলার মানুষদের কাছে পাঠাত পাপিয়া।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। সাথে তার তিন সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে পাপিয়ার স্বামী পরিচয়দানকারী মফিজুর রহমান সুমন ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশী টাকাসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অন্ধকার জগৎ। অল্প সময়ের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায় তার কলঙ্কময় অধ্যায়ের কাহিনী। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেটের ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের রওশনস ডমিনো রিলিভো নামের বিলাসবহুল ভবনে তাদের দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র, বিদেশী মদসহ অনেক অবৈধ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

র্যাব ও পুলিশ সূত্র জানায়, পাপিয়ার উপার্জনের প্রায় সব সোর্সই অবৈধ। তার মূল উপার্জন ছিল ওপর তলার লোকদের মনোরঞ্জন করে অর্থ বা সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেয়া। আর এভাবেই গড়ে তোলে সে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিত্ত-বৈভব। মাসের বেশির ভাগ দিনই তার কাটত পাঁচ তারকা হোটেলে। মাসে কোটি টাকার ওপরে ভাড়া আসত সেসব হোটেল কক্ষের। এমনও দিন গেছে যেদিন পাপিয়ার মদের বিলই এসেছে দুই লাখ টাকার ওপরে।

একাধিক সূত্র জানায়, মনোরঞ্জনের জন্য পাপিয়ার নির্দিষ্ট কিছু তরুণী ছিল, যারা পাপিয়ার চাকরি করত। পাপিয়া তাদের মাসিক বেতন দিত। আনুষঙ্গিক খরচও তাদের দিত পাপিয়া। আর তারা মনোরঞ্জন করে যে টাকা কামাত তা সরাসরি পাপিয়ার অ্যাকাউন্টে জমা হতো। এর বাইরেও অনেক তরুণী পাপিয়ার নেটওয়ার্কে কাজ করত। যাদের মধ্যে বিদেশী তরুণীরাও ছিল।
একটি সূত্র বলেছে, পাপিয়া অনেক তরুণীরই সর্বনাশ করেছে। ভালো চাকরি বা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলে অনেক তরুণীকে বাধ্য করেছে পতিতাবৃত্তিতে। সে ক্ষেত্রে তরুণীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা। অনৈতিক যৌনাচারের জন্য পাপিয়ার কাছে অনেকেই যেতেন। যাদের কাছে ওই তরুণীদের পাঠানো হতো। এই খদ্দেরদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ছিল। ক্ষমতাবান, টাকাওয়ালাসহ অনেকেই নিয়মিত খদ্দের ছিলেন এই পাপিয়া নেটওয়ার্কের।

অস্ত্র ও মাদকের তিনটি মামলায় শামীমা নূর পাপিয়াকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, পাপিয়া ছিল নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় নেতাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেন্দ্রের কিছু নেতাকে ম্যানেজ করে ওই পদ বাগায় সে। পাপিয়া কাদের হাত ধরে নেত্রী হয়েছে, কাদের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে যাতায়াত করেছে, কাদের হাত ধরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে তা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিরা এখন আতঙ্কে রয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকের নাম জানাজানি হয়ে গেছে। পাপিয়ার কাছ থেকে কিছু ছবি আর ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে; যাতে অনেককে দেখা গেছে। আবার পদ-পদবি বা অর্থের ও যোগাযোগের ভয় দেখিয়ে অনেক মানুষকে দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নিয়েছে পাপিয়া। অনেককে অনেক কাজ করতে বাধ্য করেছে ভয়ভীতি দেখিয়ে। আবার অনেকের অজান্তেই পাপিয়া তাদের সাথে ছবি তুলেছে, ভিডিও করেছে। এসব ব্যক্তি এখন বিব্রত ও লজ্জিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক নেতা গতকাল বলেছেন, এই নারী যে এতটাই খারাপ তার কোনো ধারণা ছিল না। যুব মহিলা লীগের শীর্ষ নেত্রীদের সাথে তার কাছে কয়েকবার এসেছে। ছবিও তুলেছে। তিনি কিছুই মনে করেননি। এখন তিনি খুবই বিব্রত।

পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, পাপিয়ার সাথে কাদের যোগাযোগ ছিল, কাদের ক্ষমতায় পাপিয়া এত দূর এসেছে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই এই নেটওয়ার্কের অন্যরাও গ্রেফতার হবে বলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877